ফাইনালে এসে শিরোপা জিততে জিততে হেরে গেলো বরিশাল ফরচুন । শিরোপা জিততে শেষ ১৮ বলে প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। এমন সমীকরণের সামনে ইনিংসের ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে দুই রান দেয়ার সঙ্গে ডোয়াইন ব্রাভোর উইকেট নেন সুনীল নারিন। তাতে খানিকটা চাপে পড়ে ফরচুন বরিশাল। সেই চাপ আরও বাড়ে নাজমুল হোসেন শান্তর বিদায়ে। মুস্তাফিজুর রহমানের ব্যাক অব হ্যান্ড ডেলিভারিতে এলবিডউব্লিউ হয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সেই ওভারে ৬ রান দেন মুস্তাফিজ। তাতে ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে বরিশালের প্রয়োজন ছিল ১০ রান।
তখন পেসার শহিদুল ইসলামের উপর আস্থা রাখেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। প্রথম বলে ডট দিলেও পরের বলে এক রান নিয়ে প্রান্ত বদল করেন তৌহিদ হৃদয়। তৃতীয় বলে মুজিব উর রহমানও এক রানের বেশি নিতে পারেননি। পরের বল ওয়াইড দেন শহিদুল। আর চতুর্থ বলে দুই রান নিয়ে বরিশালকে খেলায় রাখেন হৃদয়। ২ বলে যখন ৫ রান দরকার তখন হৃদয়ের ক্যাচ মিস করেন তানভীর ইসলাম। শেষ বলে হৃদয় এক রান নিলে ১ রানে হারতে হয় বরিশালকে। তাতে সাকিবের বরিশালকে হারিয়ে বিপিএলের এবারের আসরে শিরোপা জিতলো কুমিল্লা। মিরপুরে জয়ের জন্য ১৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বরিশাল। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই সাজঘরে ফেরেন মুনিম শাহরিয়ার। পুরো আসর জুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নজর কাড়লেও এদিন শহিদুলের লেংথ বলে তুলে মারতে গিয়ে ফাফ ডু প্লেসির হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন কোনো রান না করা মুনিম। ডানহাতি এই ব্যাটার ফেরার পর কুমিল্লার বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান সৈকত।
মুনিমের ফেরার ওভারের শেষ তিন বলে তিনটি চার মারেন ডানহাতি এই ব্যাটার। নিজের প্রথম ওভারে চারটি ওয়াইড দেয়ার পর দ্বিতীয় ওভারে এসে ১৪ রান দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারের ওভারে তিনটি চার মারেন সৈকত। যদিও নিজের প্রথম দুই ওভারে ৮ রান দিয়ে বরিশালের রানের চাকা টেনে ধরার চেষ্টা করেছিলেন নারিন। তবে সৈকতের ব্যাটিং তাণ্ডবে সেটা ফলপ্রসু হয়নি।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মঈন আলীর বলে সমান একটি করে চার এবং ছক্কায় ১২ রান নেন সৈকত। পরের ওভারে আবু হায়দার রনির ব্যাক অব লেংথ বলে মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে ২৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। সৈকত যখন কুমিল্লার বোলারদের তুলোধুনো করতে ব্যস্ত তখন অপর প্রান্তে নিরব দর্শক গেইল।
ইনিংসের দশম ওভারে কুমিল্লাকে ব্রেক থ্রো এনে দেন তানভীর ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের স্লটের বল লং অফের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ইমরুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ৩৪ বলে ৫৮ রান করা সৈকত। ডানহাতি এই ব্যাটার ফেরার পর কুমিল্লার বোলারদের ওপর চড়াও হন গেইল। যার শুরুটা করেন মঈনের লেংথ বলে ছক্কা মেরে।
এরপর তানভীরের ওভারের এক ছক্কা ও এক চারে ১২ রান আনেন মারকুটে এই ব্যাটার। গেইলের ঝড় থামান নারিন। ডানহাতি এই স্পিনারের লেংথ বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন গেইল। পুরো আসরে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে না পারা গেইল আউট হয়েছেন ৩১ বলে ৩৩ রানে। থিতু হতে পারেননি সাকিবও। তানভীরের লেংথ বলে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ৭ বলে ৭ রান করা সাকিব।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং করতে নামা কুমিল্লাকে আসমান ছোঁয়া সূচনা এনে দেন নারিন। প্রথম ওভারে মুজিব উর রহমানের বিপক্ষে এই ক্যারিবিয়ান নেন ১৮ রান। দ্বিতীয় ওভারে শফিকুল ইসলামের বিপক্ষে লিটন মাত্র ২ রান নিলেও নারিনের ব্যাট থেকে আসে ১৬ রান।
২ ওভারে ৩৩ রান স্কোরবোর্ডে তুলেও থামেননি নারিন। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে ৪ রানে লিটনকে বোল্ড করে সাকিব দেন মাত্র ৩ রান। আর চতুর্থ ওভারে আসে ৬ রান। তবে ইনিংসের ৫ নম্বর ওভারে সাকিবের বিপক্ষে ১৬ রান নেয়ার সঙ্গে ২১ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন নারিন।
পাওয়ার প্লে'র শেষ ওভারে মেহেদি হাসান রানাকে প্রথম বলে ছক্কা হাঁকালেও দ্বিতীয় বলে ২৩ বলে ৫৭ রানে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দেন তিনি। নারিন ফেরার পর যেন পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র। রান আউটের ফাঁদে পড়ে ৮ রানে বিদায় নেন মাহমুদুল হাসান জয়।
৭ ওভার শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে ৭৮ রান স্কোরবোর্ডে থাকা দলটিকে বেশিদূর টানতে পারেননি ফাফ ডু প্লেসি। মুজিবকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৪ রানে আউট হন তিনি। এরপর দলীয় ৯৪ ও ৯৬ রানে ইমরুল ও আরিফুলকে বিদায় করেন মুজিব ও ব্রাভো। ১০০'র আগে ৬ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে উল্টো চাপে পড়ে কুমিল্লা। এরপর সাবধানী ব্যাটিং করেন মঈন ও রনি। তবে ১৭তম ওভারে বাউন্ডারির দেখা পেলেও শেষ ৩০ বলে আসে ৩০ রান। ১৭ ওভারে দলটির সংগ্রহ দাঁড়ায় ১২৬।
সেখান থেকে পরের ২ ওভারে স্কোরবোর্ডে আরও ২২ রান যোগ করে এই জুটি। ১৯ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে দলটির পুঁজি দাঁড়ায় ১৪৮। শেষ ওভারের প্রথম বলে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন মঈন। ৩২ বলে করেন ৩৮ রান। এরপর শফিকুলের বাউন্সারে ২৭ বলে ১৯ রানে ফেরেন রনি। আরেক বাউন্সারে স্কুপ করতে গিয়ে ০ রানে ফেরেন শহিদুল। শেষ দুই বলে আসে মাত্র এক রান। ২টি করে উইকেট পান শফিকুল ও মুজিব। শেষপর্যন্ত ১৫১ রানের পুঁজি পায় কুমিল্লা।